Recent comments

ব্রেকিং নিউজ

বাসি গোলাপ


অয়ন চক্রবর্তী: 

"তুই এখানে বসেও হাসছিস?" অদিতির ভুবনজোড়া হাসির দিকে তাকিয়ে বলল অহন। অহন মুখে যাই বলুক না কেন অদিতির হাসি প্রচণ্ড পছন্দ করে অহন। এতটাই পছন্দ যে অহন মনে করে অদিতির হাসি দেখলে চাঁদও লজ্জায় মুখ ঢাকবে। তবুও শ্মশানঘাটে এরকম অট্টহাসি কি মানায়? মোটেই না। 

হাসি থামিয়ে অদিতি বলল, "কী করব বল? রোজ রোজ বিকেলবেলা তুই এরকম একটা গা ছমছমে জায়গায় আসবি? তোর ভয়ডর নাই? কী আছে এমন এখানে?

"সব কথার উত্তর দিতে হয় না। বুঝে নিতে হয়", একপ্রকার মুখ ঝামটা দিয়ে অহনের উত্তর। 

চারপাশ নীরব। সূর্য প্রায় অস্তগত। হঠাৎ ট্রাকে করে লাশ নিয়ে শ্মশানে ঢুকছে জন বিশেক মানুষ। মুহুর্মুহু হরিধ্বনিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হচ্ছে, তখন অহন কীভাবে আর ভাবনার দেশে থাকতে পারে? ভাবনার দেশ থেকে বেরিয়ে অহন বুঝলো জলে টইটম্বুর চোখটা না মুছলে একটা সমাধির ওপর টাঙানো সাইনবোর্ডে প্রিয়তমার নামটা দেখতে পারবে না। চশমা খুলে চোখটা মুছে হাতে করে আনা প্রিয়তমার প্রিয় গোলাপ ফুলটা রেখে এলো সমাধিতে। গতদিনের বাসি গোলাপটা উঠিয়ে বুকপকেটে রাখলো অহন ; কারণ অহনের কাছে ওই গোলাপটার মাঝেই লুকিয়ে আছে প্রিয়তমার স্পর্শ। অথচ অহন কিন্তু স্ববিরোধী; কারণ অহন অন্যদিকে মনে করে প্যাকেটে মোড়ানো করোনা আক্রান্ত মানুষটা -  যাকে এখানে সমাধিস্থ করা হয়েছে, সে অদিতি হতেই পারে না। অহন তো তখন এখানে ছিলো না, ছিল গ্রামের বাড়িতে। তবুও খবর পেয়ে ছুটে আসার বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু লকডাউন তা সফল হতে দেয়নি। সে পরে এক বন্ধুর মোবাইলে দেখেছিল একটা সাদা প্যাকেট মোড়ানো লাশের ছবি, তাহলে অহন কেন বিশ্বাস করবে - ওটাই ওর প্রেয়সীর নশ্বর দেহ? 

অহন জানেই না অহনের কী করা উচিত। প্রতিদিন বাসি গোলাপটার মাঝেই খুঁজে নেবে প্রিয়তমার অস্তিত্ব? নাকি সে বিশ্বাস করবে - তার অদিতি কোনো একদিন এসে তার মাথায় রামগাট্টা মেরে বলবে, "তুই এইটুকুতেই সেন্টি খাস?"

No comments